গ্রামের নাম ইউটিউব: যেখানে খাবার-আনন্দ দুটোই ফ্রি

গ্রামের নাম ইউটিউব! নামটি শুনে হয়তো অনেকই ভ্রু কুচকে নানা প্রশ্নের জাল বুনছেন বা অনেকই মুচকি হাসছেন নিশ্চয়ই? বিশ্ব যখন প্রযুক্তির ছোঁয়ায় হাতের মুঠোয়। তখন গ্রাম, শহর বা এলাকার নাম তার আদলে হতেই পারে। হুম ইউটিউব গ্রাম! কুষ্টিয়া জেলার খোকসা থানায় চিরসবুজে ঘেরা বিশুদ্ধ বাতাসে পরিপূর্ণ শান্ত ও ছোট্ট গ্রামটির নাম শিমুলিয়া।

সেখানকার লিটন আলীর উদ্যোগে বেকার যুবক, ৩০ জন নারী-পুরুষ নিয়ে গ্রামের বিচিত্র সব কাজ ও রান্না খাওয়া-দাওয়া পরিবেশন অ্যারাউন্ড মি বিডি নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারের মাধ্যমে বিশ্বের কাছে তুলে ধরায় নতুন পরিচয় পাচ্ছে গ্রামটি। এই প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামটি শুধু ইউটিউবের ছোঁয়ায় হয়ে উঠেছে আধুনিক আর স্বনির্ভর একটি গ্রাম।

গ্রামীণ উৎসবের আঙ্গিকে রান্না-বান্নাকে তারা তুলে ধরেন সারা বিশ্বের কাছে। এখানে শত শত মানুষের জন্য রান্না করা হয়, রান্নার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শৈল্পিকভাবে তুলে ধরা হয় ভিডিওতে। এখানে নেই কোনো উপস্থাপনা/সঞ্চালনায় নেই কোনো বিশৃঙ্খলা, নেই কোনো ব্যাকগ্রাউন্ড সাউন্ড। গ্রামের মানুষের আঞ্চলিক কথাবার্তাসহ হুবহু তুলে ধরা হয় ভিডিওগুলোতে। তাদের করা ভিডিও অ্যারাউন্ড মি বিডি চ্যানেলে আপলোড করা হয়।



প্রতিটি ভিডিওর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উপভোগ করেন ভোজনপ্রিয় দর্শকরা। অনুভব করেন যেন নিজের চোখের সামনেই বড় কোনো উৎসবের রান্না চলছে। রান্নার পর গ্রামের সব মানুষকে কোনো দাওয়াত ছাড়াই বিনা খরচে খাওয়ানো হয়। আবাল-বৃদ্ধ-শিশুসহ সব বয়সের মানুষ মাঠে বসে মহা উৎসবের আমেজে খাবার খায়, সে দৃশ্য এক অনন্য নিদর্শন। ভিডিওগুলো দেখলে যেন চোখ ফেরাতে মন চায় না।

শুধু তাই না, গ্রামীণ জিনিসপত্র দিয়ে খোকসার শিমুলিয়া গ্রামেই এই অ্যারাউন্ড মি বিডির সদস্যরা তৈরি করেছেন ‘থিমপার্ক’। এ পার্কের বিভিন্ন স্থাপনাগুলো বানানোসহ বিভিন্ন উৎসব পালন করে থাকেন ঘুড়ি উৎসব, পিঠা উৎসব সব কার্যক্রমের ভিডিও ধারণ করা হয়। সহজ-সরল গ্রামীণ জীবনে খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষকে আনন্দ দিতে নিজেদের চেষ্টায় কাজ করে যাচ্ছে অ্যারাউন্ড মি বিডি প্রতিষ্ঠানটি। এই ঈদকে সামনে রেখে একটা অনেক বড় হাতি তৈরি করছে। সব আধুনিকতার ছোঁয়া পাচ্ছে ইউটিউব গ্রামটি। রজমানেও ইফতার করানোসহ অসহায়দের পাশে থেকেছে তারা।



জানা যায়, পৃথিবীর বিখ্যাত চ্যানেল ‘বেস্ট এভার ফুড রিভিও শো’ এর সঞ্চালক সানি। তিনি ইউটিউবে খুঁজে পান এ অ্যারাউন্ড মি বিডিকে। আমেরিকা থেকে তিনি আসেন শিমুলিয়া ইউটিউব গ্রাম পরিদর্শন করতে। এই সানির আগমন উপলক্ষে এক বিশাল মহিষ জবাই করে ৪ হাজার মানুষ খাওয়ানো হয়। বাংলাদেশের বিখ্যাত ফুড রিভিউয়ার আদনান ফারুক এবং নায়ক হিল্লোল ও বিখ্যাত ফুড রিভিউয়ার রাফসান দ্য ছোটভাই এরা সবাই এখানে পরিদর্শন করতে এসেছিলেন।

এ বিষয়ে ‘অ্যারাউন্ডমি বিডি’ চ্যানেলটির অ্যাডমিন লিটন আলী খান বলেন, ‘২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে তার মামা দেলোয়ার হোসেন মাস্টার আর তিনি মিলে কাজ শুরু করেন। লিটন খানের একটি সফটওয়্যার ফার্ম রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মূলত গ্রামের মানুষের জন্য কিছু করাই আমাদের প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য। এখানে মূলত গ্রাম্য ধারায় রান্না করা হয়। মানুষকে দাওয়াত বাদে বিনা খরচে খাওয়ানো হয়। সহজ-সরল গ্রামীণ জীবনে আনন্দ দিতে নিজেদের চেষ্টায় যতটা করা সম্ভব, সবই করছেন এ ইউটিউব চ্যানেলের জন্য। ইতোমধ্যে ইউটিউব চ্যানেলটিতে দুই মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবার হয়েছে।’

গ্রামের সবার ইউটিউব এক্টিভিটিজের কারণে পৃথিবীজোড়া ‘ইউটিউব ভিলেজ’ নামে পরিচিতি পেয়েছে গ্রামটি। বিষয়টি দেশের জন্য খুবই গর্বের। এই চ্যানেল থেকে উপার্জিত অর্থের বড় অংশ গ্রামটির আর্থসামাজিক উন্নয়নের কাজে ব্যয় করা হয়ে থাকে। শুধু চাকরিই যে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ নয়, এই প্রথা বা চিন্তা মুছে ফেলাই তাদের এই প্রয়াস। তাদের দেখাদেখিতে গ্রামের অধিকাংশ যুবকই এখন ইউটিউব চ্যানেল খুলেছে এবং তারা অনেক ভালো কিছু করছে বা ভবিষ্যৎতে ভালো কিছুই করবে বলে মনে করে লিটন আলী খান।

লেখক: শিক্ষার্থী, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি)।


সর্বশেষ সংবাদ