করোনা আক্রান্তে ভারত এখন টপ টেন, তবুও উঠছে লকডাউন

ভারতের একটি বিমানবন্দরে যাত্রীরা
ভারতের একটি বিমানবন্দরে যাত্রীরা  © সংগৃহীত

বিশ্বে সবচেয়ে বেশি করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হয়েছেন যে সব দেশে, সেই তালিকার প্রথম দশে এখন ভারতও ঢুকে পড়েছে। ভারতে শনাক্ত হওয়া মোট করোনা পজিটিভ রোগীর সংখ্যা এখন ১ লক্ষ ৩৯ হাজারেরও বেশি এবং ইরানকে টপকে গোটা এশিয়াতে ভারতই এখন সর্বোচ্চ অবস্থানে।

গত চব্বিশ ঘন্টায় ভারতে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন প্রায় সাত হাজার– সেটিও একটি নতুন রেকর্ড। ভারতে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা যখন এমন উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে, তখনই আবার সে দেশে অভ্যন্তরীণ বিমান পরিষেবা আজ সোমবার থেকে ফের চালু করা হয়েছে।

যদিও দুমাস পর এই বিমান চালু করা নিয়ে বিভ্রান্তি ছিল চরমে, যাত্রীরাও বিরাট ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। এবং ভারতে যখন চতুর্থ দফার লকডাউনও যখন প্রায় শেষ হতে চলল, তখনই দেখা যাচ্ছে সে দেশে করোনা পজিটিভ রোগীর সংখ্যা এমন রেকর্ড হারে বাড়ছে।

এদিকে গত চারদিন ধরেই ভারতে শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা রোজ ছহাজার ছাড়িয়ে যাচ্ছে, রোজই প্রায় গত দিনের কের্ড ভাঙছে– এবং গত চব্বিশ ঘন্টায় সেটা সাত হাজারে পৌঁছে গেছে।

ফলে আজকের তারিখে ভারতে এখন মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ লক্ষ ৩৯ হাজারেরও বেশি এবং গ্লোবাল চার্টে ভারতের অবস্থান এখন আমেরিকা, ব্রাজিল, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, স্পেন, ইটালি, ফ্রান্স, জার্মানি ও তুরস্কের ঠিক পরেই।

বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, করোনাভাইরাস মহামারি ভারতে তুলনায় বেশ কিছুটা দেরিতে ও মন্থর গতিতে শুরু হলেও এখন দেখা যাচ্ছে শুরুর দিকের সেই 'অ্যাডভান্টেজ'টা খুইয়ে ভারত কিন্তু সবচেয়ে বিপন্ন দেশগুলোর তালিকায় দ্রুত উঠে আসছে।

সরকারের জন্য বিষয়টা অত্যন্ত বিব্রতকর এই কারণে, একটানা চার-চারবার লকডাউন জারি করে দেশ যখন গত বাষট্টি দিন ধরে কার্যত তালাবন্দী এবং লকডাউনের বিধিনিষেধ ক্রমশ শিথিল করা হচ্ছে– তখনই এই চরম আঘাতটা আসছে।

ভারতের এভিয়েশন বা বিমান পরিবহন সেক্টর দেশের সবচেয়ে গতিশীল শিল্পগুলোর একটি। কিন্তু দুমাসেরও বেশি আকাশে না-ওড়ার পর ভারতের বেসরকারি এয়ারলাইন সংস্থাগুলোর আর্থিক অবস্থা এখন খুবই সঙ্গীন। লকডাউন উঠলেও এর কোনও কোনওটি নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সেই সম্ভাবনা ঠেকাতেই লকডাউনের মধ্যেই ভারত সীমিত আকারে, মোটামুটি অন্য সময়ের এক-তৃতীয়াংশ ফ্লাইট চালানোর অনুমতি দিয়ে, এই পরিষেবা আজ সোমবার থেকে চালু করেছে। এমন কী, বিমান পরিবহন মন্ত্রী হরদীপ পুরী এটাও জানিয়েছেন যে সামাজিক দূরত্বের শর্ত মেনে বিমানের মাঝের সিট খালি রাখাও সম্ভব হবে না – কারণ নইলে টিকিটের দাম বহুগুণ বেড়ে যাবে।

কিন্তু সমস্যা হল, দুমাস পর যাত্রীদের প্লেনে চাপার অভিজ্ঞতাও কিন্তু এদিন মোটেই মসৃণ ছিল না। যার প্রধান কারণ, কেন্দ্রীয় সরকার ফ্লাইট চালানোর সিদ্ধান্ত নিলেও বহু রাজ্য সরকারই সে সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হতে পারেনি।

মহারাষ্ট্র, তামিলনাডুর মতো যে রাজ্যগুলোতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা খুব বেশি, তারা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে এখনই তারা মুম্বাই বা চেন্নাই এয়ারপোর্টে বিমান ওঠানামা করতে দিতে রাজি নয়। ঘূর্ণিঝড় আম্পানে বিধ্বস্ত কলকাতা বিমানবন্দর খুলে দিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারও তিন-চারদিন বাড়তি সময় চেয়েছে।

ফলত যেটা হয়েছে, শুধু দিল্লি থেকেই আজ নির্ধারিত ৮২টি ফ্লাইটের ওঠানামা বাতিল করতে হয়েছে। বহু কষ্ট করে দিল্লি এয়ারপোর্টে পৌঁছে যাত্রীরা অনেকে জানতে পেরেছেন, তাদের ফ্লাইট এদিন উড়বেই না। একই ধরনের ছবি দেখা গেছে মুম্বাই বা ব্যাঙ্গালোর বিমানবন্দরেও বাতিল হওয়া বিমানের যাত্রীরা হতাশ হয়ে টার্মিনাল বিল্ডিংয়ের বাইরেই বসে পড়েছেন।

বাধ্যতামূলক ওয়েব চেক-ইন করা নিয়েও অনেকেই হিমশিম খেয়েছেন- ফলে বিমান চলাচল শুরু করার চেষ্টা প্রথম দিনেই একটা বড় হোঁচট খেয়েছে। [সূত্র: বিবিসি বাংলা]


সর্বশেষ সংবাদ