করোনা আতঙ্কে মধ্যপ্রাচ্যে কমছে যুদ্ধের মৃত্যু

  © ডয়েচে ভেলে

সারাবিশ্ব এখন করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারীর বিরুদ্ধে প্রাণপণে যুদ্ধ করছে৷‍ ‍বেশিরভাগ দেশ লকডাউনে, চারিদিক স্তব্ধ, থেমে গেছে অস্ত্রের ঝনঝনানি। ‍তবে ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি এর মধ্যেও জটিল আকার নিচ্ছে৷।

গত সপ্তাহে সৌদি আরব হুতি বিদ্রোহীদের ছোড়া দুটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করার দাবি জানায়৷। ‍ তারপর প্রতিশোধ নিতে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় অন্তত ১৯ বার বিমান হামলা চালায়৷।

সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে মার্চ মাসে মাত্র ১০৩ জন বেসামরিক নাগরিক মারা গেছেন। ‍২০১১ সালে মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এক মাসে এত কম প্রাণহানি আর কখনো দেখা যায়নি।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ‘সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস' বুধবার এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্চে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ বাহিনী ও তাদের মিত্রপক্ষের বিমানহামলা ও গোলার আঘাতে ৫১ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।

বাকিরা বোমা বিস্ফোরণ, নির্যাতন এবং রহস্যজনক ‘গুপ্তহত্যার' শিকার করেছে। ‍এছাড়া জঙ্গিদল এক জনের শিরশ্ছেদ করেছে। এই এক মাসে আহত হয়েছেন পাঁচ শতাধিক মানুষ৷‍সংখ্যাটা গত ১০ বছরের গৃহযুদ্ধের তুলনায় নিতান্তই কম। সিরিয়াযুদ্ধ এখন পর্যন্ত তিন লাখ ৮০ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।

জাতিসংঘ কোভিড-১৯ কে বৈশ্বিক মহামারী ঘোষণার পর মার্চের শুরুতে রাশিয়ার উদ্যোগে সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে আসাদ বাহিনী, বিদ্রোহী যোদ্ধাদল এবং জঙ্গিবাহিনীর একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে আসতে সম্মত হয়েছে।

জাতিসংঘ এ সময়ে পুরো দেশে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার আহবান জানিয়েছে। সিরিয়ায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। জাতিসংঘের আশঙ্কা, দেশটির শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে যেকোনো মুহূর্তে মারাত্মক সংক্রামক এই ভাইরাস দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়তে পারে।

শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে গাদাগাদি করে থাকা গৃহহীনরা নূন্যতম সুবিধা পায় না৷‍পরিষ্কার পানি সেখানে বহু কষ্টে মেলে৷‍ সাবান যেন শুধু স্বপ্নেই দেখা যায়। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোর অসহায় মানুষকে করোনার প্রকোপ থেকে রক্ষা করতে গত ২৩ মার্চ সারাবিশ্বে অতি দ্রুত যুদ্ধবিরতি ঘোষণার আহবান জানিয়েছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেস।

গুতেরেস বলেন, ‘এখন অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে এবং একজোট হয়ে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে আমাদের জীবনের আসল লড়াই লড়তে হবে। বন্দুক, কামান আর বিমানহামলা বন্ধ করুন।’

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে ইরানের অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ। প্রায় ১৩ হাজার মানুষের দেহে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ায় এবং অন্তত ৬১১ জনের মৃত্যু হওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যে করোনাভাইরাসের এপিসেন্টার বলা হচ্ছে দেশটিকে৷

পরিস্থিতি সামলাতে সারাদেশে জুম্মার নামাজসহ বড় ধরনের সব জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে অর্থের অভাবে করোনা নিয়ন্ত্রণে অনেক পদক্ষেপই নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে আইএমএফ-এর জরুরি সহায়তা চেয়েছে সরকার।

সিরিয়া ‍ছাড়াও যুদ্ধবিধ্বস্ত ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো এবং আফগানিস্তানে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে। ‍বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, যুদ্ধের কারণে নাজুক অবস্থায় থাকা এসব দেশের জনগণ করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে মারা যাওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে আছেন।

তালেবানের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার বলা হয়, দেশের যেসব এলাকায় করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ওইসব এলাকায় আপাতত যুদ্ধ বন্ধ রাখতের তারা রাজি। তবে জঙ্গি সংগঠনটি ভাইরাসের কারণে তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে বলে সংবাদ সংস্থা এপি যে খবর প্রকাশ করেছে তা সত্যি নয় বলে দাবি করেন তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ।

তিনি বলেন, ‘তারা আমার বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করেছে। তবে আল্লাহ মাফ করুন, যদি আমাদের নিয়ন্ত্রিত কোনো এলাকায় ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হয় তবে আমরা সেখানে যুদ্ধ বন্ধ রাখবো, যেন স্বাস্থ্যকর্মীরা জনগণেকে সেবা দিতে পারেন।

ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে সৌদি আরব নেতৃত্বাধীন জোট। তাদের অস্ত্রের জোগান দিচ্ছে জার্মানি। জার্মান কোম্পানিগুলো গত বছরই সরকারের কাছ থেকে সৌদি জোটের কাছে ১০০ কোটি ইউরোর অস্ত্র বিক্রির অনুমতি পায়। অর্থমন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, বর্তমান করোনা সংকটের মধ্যেও অস্ত্র বিক্রি চলছে।

করোনায় সারা বিশ্বে ১০ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৫৩ হাজার ১১৬ জন। খবর: ডয়েচে ভেলে।


সর্বশেষ সংবাদ