‘করোনা সংকট তৈরি’র দায়ে চীনা বিদ্বেষ বাড়ছে পশ্চিমা বিশ্বে

  © ডয়েচে ভেলে

তথ্যপ্রমাণ বা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা না থাকলেও করোনাভাইরাসের দায় চীন ও চীনাদের উপর চাপানোর প্রবণতা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এমন বিদ্বেষের পরিণাম সম্পর্কে আশঙ্কাও বাড়ছে।

করোনাভাইরাস প্রথমে চীনেই ছড়িয়ে পড়েছিল বলে চীনকেই সারা বিশ্বে বর্তমান সংকটের জন্য দায়ী করছে কিছু মহল। চীনের কর্তৃপক্ষ ঠিক সময় করোনার মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছে, এমন অভিযোগ মেনে নিলেও সার্বিক বৈষম্য ও বিদ্বেষের বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক চলছে।

ইসরায়েলের এক প্রযুক্তি কোম্পানির সূত্র অনুযায়ী করোনা সংকটের জের ধরে টুইটারে চীন ও সে দেশের মানুষের বিরুদ্ধে ‘হেট স্পিচ’ প্রায় ৯০০ শতাংশ বেড়ে গেছে। সার্বিকভাবে গোটা বিশ্বে চীনা বা পূর্ব এশীয় বংশোদ্ভূত মানুষও বিদ্বেষের শিকার হচ্ছে৷ করোনা ভাইরাসের প্রসারের জন্য তাদেরই দায়ী করা হচ্ছে।

টুইটারে এমন বিদ্বেষ আরও দ্রুত ছড়িয়ে দিতে অনেকে ‘কুংফ্লু’, ‘চাইনিজভাইরাস’, ‘কমিউনিস্টভাইরাস’ ইত্যাদি হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করছে। রিপোর্ট অনুযায়ী বিদ্বেষ ছড়ায় এমন ‘হেট সাইট’ দেখার হারও প্রায় ২০০ শতাংশ বেড়ে গেছে।

অস্ট্রেলিয়ার স্কাই নিউজ চ্যানেলের এক ভিডিওতে দাবি করা হয়েছে, যে চীন ইচ্ছাকৃতভাবে গোটা বিশ্বে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে দিয়েছে। এমন প্রতিষ্ঠিত সংবদ মাধ্যমের ভিডিও বলে সেই বার্তা ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে। তথ্যপ্রমাণ বা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার তোয়াক্কা না করে অনেকেই সেই দাবি বিশ্বাস করছে।

শুধু করোনা সংকটের কারণেই চীন বা পূর্ব এশিয়ার এমন নেতিবাচক ভাবমূর্তি সৃষ্টি হয়েছে, এমনটা ঠিক নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেশ কয়েক শতাব্দী ধরে এই সম্প্রদায় সম্পর্কে নানা কুরুচিকর, ভ্রান্ত ধারণা চালু রয়েছে। এমনকি তারা রোগ ছড়ায়, এমন রটনাও বিরল নয়।

সম্প্রতি আমেরিকার নাগরিক অধিকার গোষ্ঠীগুলি এক বিশেষ ওয়েবসাইট চালু করেছে। সেখানে করোনা সংকটের কারণে জাতিগত বৈষম্য সংক্রান্ত অপরাধ জানানোর সুযোগ রয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প করোনার বদলে ‘চাইনিজ’ ভাইরাস শব্দটি বার বার ব্যবহার করায় চিনা-বিদ্বেষের মাত্রা আরও বড় আকার ধারণ করেছে। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে মুসলিম, ল্যাটিন অ্যামেরিকান ইত্যাদি সম্প্রদায় সম্পর্কে যে বৈষম্যমূলক মন্তব্য ও পদক্ষেপ নিয়ে চলেছেন, তার ফলে এমন বিদ্বেষের মাত্রা আরও প্রকট হয়ে উঠেছে।

চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধের জের ধরে চীনা ও পূর্ব এশিয়ার বংশোদ্ভূত মানুষের প্রতি বৈরি মনোভাবও বাড়ছে। আত্মপক্ষ সমর্থনে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি করোনা সংকটের প্রসঙ্গে ‘চাইনিজ’ ভাইরাস শব্দটি ব্যবহার করেছেন, কারণ এই ভাইরাস সত্যি চীন থেকেই এসেছে।

ফলে তিনি বর্ণবাদী কোনো মন্তব্য করেননি বলে দাবি করেছেন। এক চীনা কর্মকর্তা এই ভাইরাসের পেছনে মার্কিন সেনাবাহিনীর ষড়যন্ত্রের সন্দেহ প্রকাশ করায় ট্রাম্প উলটে চীনের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন। খবর: ডয়েচে ভেলে।


সর্বশেষ সংবাদ