পাড়ার প্রবেশপথ বন্ধ রেখে স্বেচ্ছায় লকডাউনে পাহাড়ি পাঁচ গ্রাম
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ৩১ মার্চ ২০২০, ০১:০৭ PM , আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২০, ০১:০৭ PM
পাহাড়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে প্রাচীন প্রদ্ধতিতে বান্দরবানের ৫টি গ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠী স্বেচ্ছায় লকডাউনে রয়েছে। বাইরের লোকজনের প্রবেশ এবং প্রয়োজন ছাড়া পাড়াবাসী বাইরে যাওয়া ঠেকাতে পাড়ার প্রবেশমুখে বাঁশের গেট দিয়ে চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে ম্রো জনগোষ্ঠীরা। এ পদক্ষেপ ব্যাপক সাড়াও ফেলেছে বান্দরবানের প্রত্যন্ত অঞ্চলে।
সোমবার বান্দরবান সদরের চিম্বুক পাহাড়ের অদূরে চারটি পাহাড়ি গ্রামের জনগোষ্ঠী চতুর্থ দিনের মতো লকডাউনে অবরুদ্ধ জীবন কাটাচ্ছেন। পাহাড়ি পাড়া (গ্রামগুলো) হচ্ছে: রাংলাই ম্রোপাড়া, মধ্যমপাড়া, সিংচ্যংপাড়া, ম্রলং ম্রোপাড়া এবং লামা সদরের ছাগলখাইয়া মংক্যচিং হেডম্যানপাড়া।
মহামারী করোনাভাইরাসের কথা শুনে ২৭ মার্চ থেকে প্রাচীন প্রথা অনুসারে পাড়াগুলোর জনগোষ্ঠী স্বেচ্ছায় অবরুদ্ধ জীবন শুরু করে। মহামারী ঠেকাতে পাহাড়ের জনগোষ্ঠী আদিযুগেও এমন প্রদ্ধতি অনুসরণ করেছে বলে দাবি ক্ষুদ্র নৃ-জনগোষ্ঠীর। রাংলাই ম্রোপাড়ার বাসিন্দা প্যালে ম্রো এবং মধ্যমপাড়া বাসিন্দা ইয়ংরে ম্রো বলেন, মহামারী ঠেকাতে পাড়া বন্ধের প্রথাটি পুরনো প্রথা। ম্রো ভাষায় এ পদ্ধতিকে বলা হয় ‘খাসুর’। সরকারি ভাষায় লকডাউন বলা হচ্ছে।
গেট দেয়ায় বাইরের মানুষ পাড়ায় ঢুকতে পারে না, পাড়ার ভেতরের লোকজনও বাইরে যেতে পারে না। প্রয়োজনে পাড়ার কেউ বাইরে গেলেও তাকে বাইরেই অবস্থান করতে হবে, পাড়ার ভেতর আসতে দেয়া হয় না। যতদিন না এটি খোলা না হয়। তারা আরও বলেন, বর্তমানে করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে এই খাসুর বানিয়েছি সবাই মিলে। যাতে করোনাভাইরাস থেকে নিজেরা রক্ষা পাই এবং পাড়াবাসীকেও রক্ষা করতে পারি। যতদিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হবে, ততদিন বন্ধ রাখা হবে পাড়াগুলো।
রেংটন ম্রো দাবি করেন, পাহাড়ি গ্রামগুলোর মানুষ দরিদ্র ও শ্রমজীবী। বর্তমানে কর্মহীন তারা। সেক্ষেত্রে সরকারের উচিত অসহায় এই পাড়াবাসীর দিকে নজর দেয়া। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ দুই বেলা খেয়ে বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করা।
এদিকে স্বেচ্ছায় লকডাউনে যাওয়া পাহাড়ি গ্রামগুলো পরির্দশনে যান বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লাসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। স্বেচ্ছায় লকডাউনে থাকা পাড়াগুলোর মানুষকে সরকারি সহায়তা পৌঁছে দেয় পার্বত্য জেলা পরিষদ। এ বিষয়ে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা বলেন, করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার মানুষকে ঘরে থাকার পরামর্শ দিচ্ছে। সারা দেশ লকডাউন করা হয়েছে।
কিন্তু পাহাড়ি গ্রামের মানুষ নিজেরাই লকডাউন করে পাড়া বন্ধ করে দিয়েছে। এটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। লকডাউনে থাকা পাড়াগুলোর জনগোষ্ঠীরা যেন খাবারে কষ্ট না পায়, সেজন্য পরিষদের পক্ষ থেকে চাল, ডাল, লবণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।