২৬ মার্চ ২০২০, ০৯:০০

করোনা মোকাবিলার জন্য বেকার ভাতা দ্বিগুণ করেছে অস্ট্রেলিয়া

  © সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়ায় ক্রমেই বেড়ে চলেছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা। গত দুই দিনে নতুন করে ৪৩১ জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে দেশটির স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আক্রান্তের হিসাব অনুযায়ী দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলছে।

এদিকে লকডাউন, আজকে না কালকে এ নিয়ে ফেডারেল ও রাজ্য সরকারগুলোর মধ্যে কিছুটা সমন্বয়হীনতা দেখা দিয়েছে। স্কুল খোলা থাকবে কি না, এ নিয়ে টানাপোড়েন, নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও ১৩৩ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আরোহীসহ রুবি প্রিন্সেস নামের প্রমোদতরির সিডনিতে নোঙর করার অনুমতি নিয়ে দোষারোপের পালা চলছে। ফলে তীব্র সমালোচনার মধ্যে ধীরে ধীরে এগোচ্ছে অস্ট্রেলিয়া সরকার।

প্রাথমিক অবস্থায় ৫০০ জনের ওপরে গণজমায়েত বন্ধ দিয়ে সরকার এখন দূরত্ব বজায় রেখে বিয়েতে ৫ জন, দাফন-কাফনে ১০ জনের উপস্থিতি নির্ধারণ করে দিয়েছে। অপরিহার্য নয় এমন ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে পুরোপুরি লকডাউনের দিকে যাচ্ছে দেশ। আগে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকদের দ্রুত দেশে ফিরে আসার নির্দেশনার পর আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এক পরিসংখ্যান বলছে, সবকিছু বন্ধ হয়ে গেলে আপাতত প্রায় ১০ লাখ লোক চাকরি হারাবেন এবং জুন মাস নাগাদ এ সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে প্রায় ১৫ লাখে।

এখন পর্যন্ত দেশটিতে ২ হাজার ৪৩১ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের। গতকাল বুধবার সিডনির স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় কুইন্সল্যান্ড রাজ্যর ৬৮ বছর বয়সের একজন পুরুষ মারা যান। তিনি রয়েল ক্যারিবিয়ান নামের প্রমোদতরির যাত্রী ছিলেন।

নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যে গত মঙ্গলবার রাত ৮টা থেকে বুধবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত নতুন করে ২১১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। ফলে এই রাজ্যে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১ হাজার ২৯। অন্যদিকে ভিক্টোরিয়াতে নতুন করে আরও ৫৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। ফলে সেখানে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪৬৬। এ ছাড়া কুইন্সল্যান্ডে নতুন করে ৪৬ জন আক্রান্ত হওয়ায় সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৪৩। এ ছাড়া সাউথ অস্ট্রেলিয়ায় ১৯৭, ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ায় ২০৫, ক্যানবেরায় ৪৪, তাসমানিয়ায় ৪২ এবং নর্দান টেরিটরিতে ৫ জন আক্রান্ত হয়েছে।

নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী ডেভিড এলিয়ট বলেছেন, বুধবার রাত ১২টার পর থেকে কেউ যদি সেলফ আইসোলেশন ও সোশ্যাল ডিসট্যান্সের নিয়ম ভাঙে, তাহলে ব্যক্তিপর্যায়ে ১ হাজার ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে ৫ হাজার ডলার জরিমানা এবং ৬ মাসের জেল হতে পারে।

৮ হাজার ৩৬০ কোটি অস্ট্রেলিয়ান ডলারের প্রণোদনা বাজেটের আওতায় বেকার ভাতা দ্বিগুণ করা হয়েছে। সাধারণত একজন অস্ট্রেলিয়ান বেকার নাগরিক প্রতি দুই সপ্তাহে সরকার থেকে সাড়ে ৫০০ ডলারের মতো ভাতা পান। এ টাকা দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রেক্ষাপটে একজন বেকার নাগরিক খুবই সাধারণ জীবন যাপন করতে পারেন। এখন এই দুর্যোগের সময় আগামী ছয় মাসের জন্য বেকার ভাতা দ্বিগুণ করা হয়েছে। এ ছাড়া সোল ট্রেডার ও কাজ্যুয়াল কর্মী, যাঁরা বর্তমানে প্রতি ১৫ দিনে ১ হাজার ৭৫ ডলারের কম উপার্জন করেন, তাঁরাও এই সুবিধা পাবেন। এ ছাড়া বয়স্ক, শারীরিক প্রতিবন্ধী, নিম্ন আয়ের যেসব অভিভাবক শিশু অথবা স্কুলপড়ুয়া বাচ্চাদের লালন পালন করেন, তাঁদের নিয়মিত ভাতার সঙ্গে অতিরিক্ত ভাতা হিসেবে এককালীন ৭৫০ ডলার দেওয়া হবে। এ ছাড়া ২০২০ ও ২০২১ এই দুই বছর নিজের সুপারএ্যানুয়েশন ফান্ড থেকে ১০ হাজার ডলার করে তুলতে পারবেন তাঁরা।

ভাতা পাওয়ার জন্য রাষ্ট্রীয় ভাতা প্রদান সংস্থা সেন্টার লিংকে যাঁরা ইতিমধ্যে তালিকাবদ্ধ আছেন, তাঁদের নতুন করে আর তালিকাবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজন নেই। অন্যরা ব্যক্তিগতভাবে অথবা অনলাইনে তালিকাবদ্ধ হতে পারবেন। এ ছাড়া বিদেশি কর্মী যাঁরা অস্ট্রেলিয়ায় কাজ করছেন, তাঁদেরও এককালীন কিছু ভাতা দেওয়ার পরিকল্পনা বিবেচনা করছে সরকার। তা ছাড়া প্রায় ৭ লাখ ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীর ব্যবসা চালু রাখতে কর্মচারীদের বেতন দিতে কিছু ট্যাক্স ফ্রি নগদ প্রণোদনা ও সহজ ঋণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার।