সাইকেলে চেপে সুখী থাকার উপায় বলে বেড়ান হান্না কার্ন

  © সংগৃহীত

সুখ আসলে কী। কোথায় পাওয়া যাবে সুখের দেখা। আছে কি সুখী থাকার সহজ কোনো উপায়? উত্তরটা যা-ই হোক না কেন—মানুষকে সুখী থাকার উপায় বলে বেড়ান তিনি। সাইকেলে চেপে এক দেশ থেকে অন্য দেশে ঘুরে বেড়ান। ছয় ভাই, দুই বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। ছোটবেলায় মা-বাবার বিচ্ছেদ হলে চরম হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। এক সময় নিজেই খুঁজে বের করেন সুখের ঠিকানা। আরো জানতে পারলেন কী করলে সুখী হওয়া যাবে এবং মিলবে প্রকৃত সুখের সন্ধান। তখন তার বয়স মাত্র আঠারো বছর। সময় ২০১৩ সাল। এই সময় পাঁচটি ধাপে তিনি সুখের সন্ধান পান। এই পাঁচটি ধাপ হচ্ছে—চিন্তা-ভাবনার প্রতিফলন, চারপাশের বিষয়বস্তুর পর্যবেক্ষণ, প্রেরণা গ্রহণ, উদ্দেশ্য নির্ধারণ ও কাজ শুরু।

এতক্ষণ যে সুখী মানুষটির কথা বলা হলো তিনি হান্না কার্ন। ব্রিটিশ নাগরিক। ইতিমধ্যে তিনি সাইকেলে চেপে পাঁচটি দেশ ঘুরেছেন। তার প্রকল্পের নাম Hannah's Happiness Project। তিনি প্রাণিদের প্রতি বৈষম্য, প্লাষ্টিক পণ্য বর্জন, নারী সমতা, জলবায়ুর অভিঘাত নিয়ে কাজ করেন। মানুষকে সচেতন করে তোলেন। ২৪টি দেশ ভ্রমণ করা হান্নার টার্গেট। যা ২০২১ সালের মধ্যেই তিনি শেষ করতে চান। গত বছর এপ্রিল মাসে ভিয়েতনাম থেকে তার যাত্রা শুরু হয়। বাংলাদেশে এসেছেন গত ৩ ফেব্রুয়ারি। এত কিছু থাকতে তিনি ভ্রমণের জন্য সাইকেল বেছে নিলেন কেন? তিনি বলেন, ‘কম খরচে সাইকেলে অনেক পথ ভ্রমণ সম্ভব। মানুষের সাথে যোগোযোগ বেশি হয়। যেটা যান্ত্রিক যানবাহনে এতোটা সম্ভব নয়। সাইকেল চালিয়ে সহজে মানুষের কাছে যাওয়া যায়। তাই আমি যাতায়াতের মাধ্যম হিসাবে বাই সাইকেল বেছে নিয়েছি’।

হান্না কার্ন নিজে দুটি ক্ষুদ্র ব্যবসা চালু করেছিলেন। এক সময় তার মনে হলো, মানুষের জন্য কাজ করাতেই তার সুখ। তিনি আনন্দ পান। সব ছেড়ে চ্যারিটি প্রজেক্ট শুরু করেন। মানুষের জন্য সুখ খুঁজতে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েন। সুখ আসলে কী? হান্নার মতে, ‘সুখ হলো একটি প্যাকেজ। আমাদের জীবনের প্রতিটি ঘটনাকে আমরা কীভাবে গ্রহণ করি তার ওপর নির্ভর করবে আমরা সুখী নাকি অসুখী’। নিজের সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য সবই তার কাছে তুচ্ছ। তিনি প্রকৃতই মানুষের জন্য কাজ করেন। তিনি একটি তহবিল গঠনের লক্ষে কাজ করছেন। যেন তার উদ্যোগ মাঝপথে অর্থাভাবে থেমে না যায়। এরই মধ্যে তহবিলে বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে ছয় হাজার পাউন্ড জমেছে। তিনি মনে করেন, সবাই সহযোগিতা করলে ৫০ হাজার পাউন্ডের তহবিল হবে। সাইকেল ভ্রমণে মানুষের কাছ থেকে অনুদান পাওয়া যায়। সেইসঙ্গে জমাকৃত অর্থ তিনি চারটি চ্যারিটি প্রতিষ্ঠানে দান করেন। তার ওয়েব সাইটের ঠিকানা— hannahshappinessproject.com

বাংলাদেশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, মানুষের আতিথেয়তায় মুগ্ধ হান্না। সিলেট-মৌলভীবাজার-শ্রীমঙ্গল, চাঁদপুর, বরিশাল ঘুরে বেড়িয়েছেন। বরিশালে নদী, লঞ্চযাত্রা তাকে মুগ্ধ করেছে। একটি ঘটনা হান্নাকে কিছুটা অবাক করে। আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন তিনি। চাঁদপুর থেকে গভীর রাতে তিনি বরিশাল পৌঁছেন। রাত দুটো বাজে তখন। কোথায় যাবেন, কী করবেন ভেবে না পেয়ে অবশেষে ‘বরিশাল সাইক্লিষ্ট’ নামে একটি পেজে পোস্ট দেন। হান্না বলেন, আমি ভাবতেই পারিনি। এত দ্রুত সাড়া পাব। লাল-সবুজ সোসাইটির তাহসিন, সাব্বির আমাকে অভ্যর্থনা জানায়। ইশরাত জাহান নামে এক সমাজকর্মী, তরুণ এক উদ্যোক্তার বাসায় নিয়ে যায়। হান্না জানান, মধ্যরাতে পশ্চিমা কোনো দেশে এমন পোস্ট দিলে কেউ এগিয়ে আসতো না। বরিশালের নদী, লাল সবুজ সোসাইটির সদস্যদের স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ তার ভালো লেগেছে বলে জানান। বরিশালের প্রকৃতি ও মানুষ ভালো লাগায় হান্না এখানে একদিন বেশি অবস্থান করেন।

হান্না কার্ন বলেন, ‘এদেশের মতো অতিথিপরায়ণ দেশ দ্বিতীয়টি খুঁজে পাইনি। সময় সুযোগ হলে আমি আবারও বাংলাদেশে আসব। আমি বাংলাদেশকে নিয়ে কাজ করতে চাই। এ দেশের তরুণদের মধ্যে অমৃত সম্ভাবনা রয়েছে’। তিনি লাল-সবুজ সোসাইটির তরুণদের একটি ডকুমেন্টারি তৈরির দায়িত্ব দিয়ে যান। আর লাল-সবুজ সোসাইটির তরুণদের কাজ দেখে তিনি অনুপ্রাণিতও হন। বরিশালকে নিয়ে তিনি একটি ভিডিও বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেও জানা যায়।

হান্না বিদেশিদের কাছে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে চান। যেন বিদেশি পর্যটকরা অপরূপ বাংলাদেশকে দেখতে আসে। হান্না বলেন, ‘অনলাইনে আমার নিজস্ব ব্লগ ও সোশ্যাল মিডিয়ায় বাংলাদেশকে সকলের সামনে তুলে ধরতে চাই’। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়েও তিনি আমরণ কাজ করে যেতে চান। ২৩ ফেব্রুয়ারি ভারতে বিশ্বখ্যাত কনফারেন্স ‘টেড টক’ তার জীবনের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা শেয়ার করবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

সুত্র: জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাক, প্রতিবেদক মুহাম্মদ শফিকুর রহমান

 

 


সর্বশেষ সংবাদ