হারিয়ে যাওয়া ইয়াসিনকে বাবার কোলে ফেরাল ফেসবুক!

বর্তমান বিশ্বায়নের এই যুগে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি আলোড়ন সৃষ্টি করেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কি খাম-খেয়ালি নাকি বিশ্বব্যাপী সব থেকে বড় পরিবর্তন সাধন করেছে? সর্বস্তরের মানুষ এখন এগুলোর মধ্যে তাদের জীবনের বড় একটা অংশ অতিবাহিত করছে। তাদের আবেগ-অনুভূতি, মতামত বা বন্ধুত্ব সবকিছু এটিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে। শুধু কি তাই, বিশ্বের ইতিহাস পরিবর্তনের নেপথ্যে এটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে।

তবে ইয়াসিনের গল্পটা এত বৈপ্লবিক না, অতি সাধারণ; তবে হৃদয়ছোঁয়া। কারণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণেই লঞ্চঘাটে নিখোঁজের চারদিন পর বাবা-মাকে খুঁজে পেয়েছে সে। দশ বছর বয়সী ঢাকার একটি মাদরাসায় পড়ছে। মঙ্গলবার দুপুরে পটুয়াখালী লঞ্চঘাট থেকে ইয়াসিনকে বাড়ি নিয়ে যান তার বাবা। নিখোঁজের চারদিন পর ইয়াসিনকে খুঁজে পেয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলেন বাবা-মা। ইয়াসিন পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বগা এলাকার সুলতান খাঁর ছেলে।

প্রিন্স আওলাদ-৭ লঞ্চের সুপারভাইজার মিলন মোল্লা বলেন, সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকার সদরঘাট থেকে পটুয়াখালীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে প্রিন্স আওলাদ-৭ লঞ্চ। তখন যাত্রীদের সঙ্গে এক মাদরাসাছাত্র উপস্থিত ছিল। মঙ্গলবার সকালে পটুয়াখালী ঘাটে লঞ্চ পৌঁছলে সব যাত্রী নেমে গেলেও নামেনি ওই ছাত্র। পরে তাকে নামতে বললে কান্না শুরু করে। পরিচয় জানতে চাইলে ছেলেটি জানায় ঢাকায় মাদরাসায় পড়ে।

লঞ্চের সুপারভাইজার মিলন মোল্লা বলেন, ছেলেটি তার পরিচয় বলতে না পারায় কান্না থামিয়ে নাস্তা করিয়ে আমার হেফাজতে রাখি। পরে তার ছবি তুলে ফেসবুকে দিয়ে পরিচয় জানতে চাই। সেই সঙ্গে ফেসবুক স্ট্যাটাসে উল্লেখ করি, ‘ছেলেটি আমার হেফাজতে রয়েছে। যদি কারও পরিচিত হয় তবে আমার সঙ্গে যোগাযোগের অনুরোধ করছি।’ পরে ‘পটুয়াখালীর লঞ্চ’ ফেসবুক গ্রুপে আমার স্ট্যাটাসটি পোস্ট হলে ভাইরাল হয়ে যায়।

মিলন মোল্লা আরও বলেন, আমাদের লঞ্চের এক কেরানি ছুটিতে রয়েছেন। তিনি গ্রুপে স্ট্যাটাসটি দেখে বাউফল উপজেলার বগা এলাকায় বসে আলোচনা করছিলেন। এ সময় স্থানীয় কয়েকজন যুবক জানান ছেলেটির নাম ইয়াসিন। বাবার নাম সুলতান খাঁ। চারদিন আগে ছেলেটি হারিয়ে যায়। তার বাড়ি বগা এলাকায়। পরে বাড়িতে খবর দিলে পরিবারের লোকজন লঞ্চঘাটে উপস্থিত হন। এরপর তাদের কাছে ইয়াসিনকে হস্তান্তর করা হয়।

ইয়াসিনের বাবা সুলতান খাঁ বলেন, সকালে খবর পেয়ে লঞ্চঘাট যাই। সেখানে গিয়ে চারদিন আগে হারিয়ে যাওয়া ইয়াসিনকে খুঁজে পাই। আল্লাহর কাছে অনেক অনেক শুকরিয়া। লঞ্চের সুপারভাইজার মিলন মোল্লাকে অনেক ধন্যবাদ। তার ফেসবুক স্ট্যাটাসের কারণে আমার হারানো সন্তানকে খুঁজে পেলাম।


সর্বশেষ সংবাদ