লাখ টাকাতেও মিলবে না এই ভালোবাসা

একদল তরুণ-তরুণীকে ঘিরে আছে ময়লা, ছেড়া জামা গায়ে দেয়া কিছু শিশু। ওদের সারিবদ্ধ করে হাতে হাতে তুলে দিচ্ছে খাবারের প্লেট। পোলাও ভর্তি প্লেটে থরে থরে সাজানো ডিম, মাংস আর গাজর-টমেটোর সালাদ। শুক্রবার দুপুরে এই অমূল্য দৃশ্য চোখে পড়ে রংপুরেরর কারমাইকেল কলেজের অডিটরিয়ামের বারান্দায়।

আজ পহেলা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এ উপলক্ষ্যে গায়ে হলদে শাড়ি আর খোঁপায় রংবেরংয়ের ফুল গেথে বন্ধুদের নিয়ে বসন্ত বরণ আর ভালোবাসা দিবসের আড্ডায় ব্যস্ত অন্য দশজন। কিন্তু দিবসটি ভিন্ন আমেজে বরণ করল মানবতার পথিক নামের সংগঠনের সদস্যরা।

হাতে খাবারের প্লেট পাওয়ার পর মুখের কোনে তৃপ্তির হাসি নিয়ে অডিটোরিয়ামে বিছানো চটের উপর খেতে বসে শিশুরা। স্বেচ্ছাসেবকদের কেউ পোলাও, কেউ তরকারী আবার কেউ গ্লাসে গ্লাসে পানি ঢালছে। এরই ফাঁকে কর্মীদের সাথেও খাবার ভাগ করছে কোনো কোনো শিশু। পেটপুরে খাবার পর ওদের হাসিমাখা মুখের সাথে নিজেদের মোবাইল ক্যামেরায় বন্দি করছে বর্ণালী, নীলিমারা।

এরপর কানামাছি, ভো-ভো, মোরগ লড়াইসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতা আর নাচ-গানে মেতে ওঠে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো শিশুরা। পুরস্কার হাতে পেয়ে বিজয়ীদের সে কি উচ্ছ্বাস।

আয়োজক সংগঠন মানবতার পথিকের সাধারণ সম্পাদক রাজ সরকার বললেন, ভালোবাসা দিবসে সবাই কতকিছু করে। একে অপরের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে। কিন্তু রাস্তাঘাটের এই শিশুরা কারো ভালোবাসা পায় না। বন্ধু-বান্ধবদের সহযোগিতা আর এর ওর কাছে হাত পেতে ওদের সাথে ভালোবাসা ভাগাভাগি করতে এই আয়োজন।

সংগঠনের সভাপতি বর্ণালী আক্তার মেধা বলেন, এই শিশুদের কারো বাবা নেই, কারো মা নেই। আবার বাবা-মা থাকলেও তারা গরিব হওয়ায় সন্তানদের মুখে মাছ-মাংস তুলে দিতে পারে না। ওদের মলিন মুখে এক চিলতে হাসির জন্যই বন্ধুদের নিয়ে এই উদ্যোগ। মেধা বললেন, একবেলা খাবার পেয়ে সুবিধাবঞ্চিত এই শিশুদের কাছে যে ভালোবাসা পাওয়া যায় তা লাখ টাকাতেও মিলবে না। ভালোবাসা দিবসে নানা ভাবে অর্থের অপচয় না করে, সবাই যদি ওদের পাশে দাঁড়াই তবেইতো সমাজ এগিয়ে যাবে।

২০১৭ সালে কারমাইকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা গড়ে তোলে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মানবতার পথিক। সেই থেকে প্রতিবছর ভালোবাসা দিবস, শীত, বন্যা আর ঈদের মতো উৎসবে সাধ্যমতো সাহায্যের হাত নিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায় সংগঠনের কর্মীরা।


সর্বশেষ সংবাদ