অভিজিৎকে ডি লিট, বিক্ষোভে সমাবর্তন ছাড়লেন রাজ্যপাল

  © সংগৃহীত

শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনের মুখে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠান গিয়েও ফিরে আসতে হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তথা রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে। সমাবর্তন উপলক্ষে নজরুলমঞ্চে পৌঁছেও বিক্ষোভের জেরে অনুষ্ঠানস্থল ছেড়ে বেরিয়ে যেতে হয় তাকে।

শিক্ষার্থীদের শান্ত করতে মঞ্চে ওঠেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়। শিক্ষার্থীদের বার বার অনুরোধ করেও কাজ না হওয়ায় শেষমেশ শর্তের ভিত্তিতেই সমাবর্তন অনুষ্ঠান শুরু হয়। নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে সাম্মানিক ডি লিট তুলে দেন উপাচার্য।

আজ মঙ্গলবার কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। তবে এদিন সকাল পর্যন্ত স্পষ্ট ছিল না ওই অনুষ্ঠানে কারা থাকবেন। এ দিন দুপুরে সমাবর্তন উপলক্ষে নজরুল মঞ্চে পৌঁছন আচার্য জগদীপ ধনখড়। কিন্তু, ঢোকার আগেই তাঁকে ঘিরে প্রবল বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থীদের একাংশ। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ), জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) এবং জাতীয় জনসংখ্যা রেজিস্টার (এনপিআর)-এর বিরোধিতায় তাঁরা ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দিতে থাকেন। শিক্ষার্থীদের হাতে ছিল সিএএ-এনআরসি-এনপিআর বিরোধী কালো পতাকা, প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন।

তখন গাড়িতে কার্যত অবরুদ্ধ ছিলেন আচার্য। কিছুক্ষণ বসে থাকার পর আচার্যকে কোনও রকমে নজরুল মঞ্চের ভেততরে ঢোকানো হয়। কিন্তু, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ততক্ষণে মঞ্চের একেবারে সামনে পৌঁছে গেছে। গোটা নজরুল মঞ্চ ততক্ষণে ভরে গিয়েছে। নোবেলজয়ী অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ও পৌঁছে গিয়েছেন সমাবর্তনস্থলে। শিক্ষার্থীদের মুখে তখনও স্লোগান, ‘গো ব্যাক ধনখড়’, ‘ওয়েলকাম অভিজিৎ’।

সমাবর্তনে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য উপস্থিত থাকবেন। তিনিই অভিজিতের হাতে সাম্মানিক ডি লিট তুলে দেবেন। প্রাথমিক ভাবে এমনটাই ঠিক ছিল।কিন্তু শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের জেরে পরিস্থিতি পুরোটাই বদলে যায়। শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ায় পরিস্থিতি শান্ত হয়।

মূল মঞ্চে না উঠলেও ভিতরের একটি ঘরে উপাচার্যের পাশাপাশি অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও বেশ কিছুক্ষণ কথা হয় আচার্য-রাজ্যপালের। নজরুল মঞ্চ ছেড়ে যাওয়ার আগে আচার্য জগদীপ ধনখড় বলেন, ‘‘অশান্তি চাই না। অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিজের হাতে ডি লিট দিতে পারলাম না। আক্ষেপ থাকবে।ওঁর ডি লিটের মানপত্রে আমি সই করেছি।’’

গত ২৪ ডিসেম্বর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল সমাবর্তন। সেই সমাবর্তন অনুষ্ঠানও উচ্চকিত হয়ে ওঠে প্রতিবাদের মঞ্চ হিসেবে। কেউ মঞ্চে উঠে প্রতিবাদ করেন। কেউ বা প্রতিবাদের ব্যাজ পরে এসেছিলেন। কেউ পদক নেওয়ার মুহূর্তেও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। কেউ আবার অনড় ছিলেন রাজ্যপালের বিরোধিতায়। রাজ্যপাল ওই অনুষ্ঠানে আসেননি।তা সত্ত্বেও প্রায় ৩০ জন পড়ুয়া ওই দিন ডিগ্রি নেননি। ডিগ্রি নানিয়েই তাঁরা সিএএ-এনআরসি-এনপিআরের বিরুদ্ধে সমাবর্তন স্থলের সামনে বিক্ষোভ দেখান। সেই ঘটনারই যেন পুনরাবৃত্তি হল এ দিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে।


সর্বশেষ সংবাদ