বাস্তবে বাংলাদেশি ‘ভাইজান’কে দেখল ভারতবাসী

  © টিডিসি ফটো

বলিউড অভিনেতা সালমান খান অভিনীত ‘বজরাঙ্গি ভাইজান’ সিনেমার শেষ দৃশ্যটি দেখে চোখ ভিজিয়েছেন অনেকেই। ভুল করে ভারতে চলে আসা এক বোবা মেয়েকে পাকিস্তানে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনার ওপর নির্মিত ছবিটি সবার প্রশংসা কুড়িয়েছিল।

এবার ছবির সালমান খান চরিত্রের বাস্তবে দেখা মিলেছে। সত্যিকারের বাংলাদেশি ‘ভাইজানের’ সাক্ষাৎ পেয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মানুষ। খবর আনন্দবাজারের।

জানা গেছে, পথ হারিয়ে বাংলাদেশ চলে আসা এক বোবা ছেলেকে ভারতে তার পরিবারের কাছে ফেরত দিতে বাংলাদেশি যুবক আরিফুল বর্তমানে নদীয়ার পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কখনও পথচারী মানুষকে, কখনও চা বা মুদির দোকানে ঢুকে একটা ছবি দেখিয়ে তিনি জানতে চাইছেন— ‘দেখুন, ছেলেটাকে চিনতে পারছেন?’ কেউ বিরক্ত হচ্ছেন। কেউ মাথা নেড়ে বলছেন— ‘চিনতে পারছি না তো!’

আরিফুল ইসলামের বাড়ি বাংলাদেশের কুষ্টিয়ায় দামুড়হুদা থানার ছয়ঘরিয়া গ্রামে। নদীয়ার কৃষ্ণগঞ্জে গেদে চেকপোস্ট থেকে তার গ্রাম দুই কিলোমিটার দূরে। অনেক কষ্টে টাকা জমিয়ে ভারতে যাওয়ার পাসপোর্ট-ভিসা করেছেন।

আপাতত হাঁসখালীর কমলপুর গ্রামে এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের বাড়িতে উঠেছেন আরিফুল।

মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই বেরিয়ে পড়েছেন ছবি হাতে। বৃহস্পতিবারের মধ্যে চষে বেরিয়েছেন কমলপুর, গাজনা, বগুলা, মাজদিয়া– এমনকি সীমান্ত লাগোয়া বানপুর বাজারও।

গত মঙ্গলবার গেদে চেকপোস্ট হয়ে ভারতে ঢুকেন আরিফুল। উদ্দেশ্য, একদিন আচমকা খুঁজে পাওয়া ১৪ বছরের মূক-বধির কিশোরকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেবেনই।

আরিফুলের বরাতে আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, সেদিন ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তঘেঁষা জমিতে চাষ করছিলেন আরিফুল। হঠাৎই দেখতে পান, মাঠের মাঝে বসে কান্নাকাটি করছে এক কিশোর।

তার সন্দেহ হয়, কোনোভাবে সীমান্ত পেরিয়ে সে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। কাছে গিয়ে নাম-ঠিকানা জানতে চান তিনি। কিন্তু প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। ধীরে-ধীরে আরিফুল বুঝতে পারেন, ছেলেটি শুনতে বা বলতে পারে না।

এর পর ছেলেটিকে তিনি বাড়ি নিয়ে যান। সেই থেকে আরিফুলের বাড়িতেই রয়েছে ছেলেটি। বাড়ির ছেলেই হয়ে গেছে প্রায়। তবে ছেলেটি হিন্দু না মুসলিম তা জানেন না তারা। কিন্তু আরিফুলের মা আঞ্জু বিবি আদর করে তার নাম রেখেছেন ‘মনসুর’।

আরিফুল বলেন, ছেলেটি প্রথম দিন থেকে আঙুল দিয়ে শুধু ভারতের দিকে দেখাত। সে কারণেই এখানে ওর বাড়ি খুঁজতে এসেছি।’

আরিফুল জানান, তারা ছয় ভাই, মনসুরকে নিয়ে সাত। দরিদ্র কৃষক পরিবার। এতদিন পয়সা জোগাড় করে ভারতে আসতে পারেননি। তবে মনসুরের মনখারাপ তাকে আসতে বাধ্য করেছে।

তিনি বলেন, ‘ছেলেটির রোজ চোখের জল ফেলতে দেখে মা ঠিক থাকতে পারে না। বলেছে, যেমন করেই হোক তাকে তার পরিবারের কাছে ফেরাতে হবে।’


সর্বশেষ সংবাদ