মুভি রিভিউ: আগুনের পরশমণি

১৯৯৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলাদেশী বাংলা ভাষার চলচ্চিত্র আগুনের পরশমণি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভিত্তিক এই চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন বাংলাদেশের বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। এটি তাঁর নিজের লেখা উপন্যাস অবলম্বনে নির্মাণ করেন এবং এটিই তাঁর পরিচালিত প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। এতে অভিনয় করেছেন বিপাশা হায়াত, আসাদুজ্জামান নূর, আবুল হায়াত, ডলি জহুরসহ আরো অনেকে। বাংলাদেশ সরকারের অণুদানের ছবি আগুনের পরশমণি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রসহ আটটি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে। এ  চলচ্চিত্রটির রিভিউ লিখেছেন- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ছাত্রী সাদিয়া বিনতে সানোয়ার

১৯৭১ সালের মে মাস। অবরুদ্ধ ঢাকা নগরী পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এই নগরীকে নিয়ে নিয়েছে হাতের মুঠোয়। অবরুদ্ধ ঢাকার নিস্তব্ধ রাতে ছুটে চলেছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সাজোয়া গাড়ির বহর। তীব্র হতাশা,তীব্র ভয়ে কাঁপছে বাংলাদেশের মানুষ। চলচ্চিত্রটি একটি পরিবারকে কেন্দ্র করে তুলে ধরা হয়েছে। পরিবারের কর্তা মতিন সাহেব ট্রানজিস্টার শোনার চেষ্টা করছেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র শোনার চেষ্টা করছেন। এই সময়ে তিনি বঙ্গবন্ধুর বজ্রকন্ঠে বলে উঠা কথাগুলো শুনতে পান-রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দিবো এদেশের মানুষকে মুক্ত করেই ছাড়বো ইনশাআল্লাহ/ এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।

চলচ্চিত্রটিতে যুদ্ধের সময়ে নারীদের যে ভয়াবহ হাল হয়েছিল তাও তুলে ধরা হয়েছে। চলচ্চিত্রের প্রধান নায়িকা রাত্রি যুদ্ধের জন্য ঘর থেকে বের হতে পারছে না যার ফলে তার দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। সে ছটফট করছে কখন দেশ স্বাধীন হবে। সে মনে মনে ঠিক করে রেখেছে যেদিন দেশ স্বাধীন হবে সে তার পোষাপাখি দুটোকে মুক্ত  আকাশে ছেড়ে দেবে, তার ঘরে বন্ধ করে রাখা ঘড়িটি সে আবার চালু করে দিবে। মতিন সাহেবের পরিবারে কয়েকদিন পর এসে হাজির হন তার বন্ধুর ছেলে বদিউল আলম যিনি মুক্তিবাহিনীর প্রধান সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন। প্রথমে যখন তিনি ওই পরিবারে আসেন তখন কেউ তাকে ভালভাবে না দেখলেও পরবর্তীতে যখন জানতে পারেন তিনি মুক্তিযোদ্ধার সদস্য  তখন সবাই তাকে অনেক ভালোবাসা দিয়ে রাখার চেষ্টা করেন। কিন্তু মতিন সাহেবের স্ত্রী বদিকে মেনে নিতে পারছিলেননা তার বাড়িতে থাকতে দেওয়ার জন্যে শুধুমাত্র তার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে।

বদি এবং তার সাথের মুক্তিযোদ্ধারা একের পর এক অভিযান করে সফলতা লাভ করে।কিন্তু এক এক করে তারা পাকবাহিনীর হাতে খুন হয় এবং কেউ কেউ বন্দী হয়।তাদেরই একজন রাশেদুল করিম গেরিলাযোদ্ধা ধরা খাওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে পাকবাহিনীদের কোনো তথ্য দিতে অস্বীকার  করে এবং থুথু ছিটিয়েছেন পাকিস্তানী মেজরের মুখে। তার হাতের আঙুল কেটে ফেলা হয় তারপরও তিনি মাথা নোয়ায়নি। অবশেষে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

এদিকে পাকিস্তানিদের হাতে গুলিবদ্ধ হয়ে বদি মরণশয্যায়। তাকে সারানোর মত ডাক্তার ও ঔষধের জন্য সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে থাকে মতিন সাহেব ও তার পরিবারের সকলে।তিনি আরেকটি সকাল দেখতে পাবে এই আশা নিয়ে রাত্রি সারারাত দুয়ারে বসে ভোরের অপেক্ষা করতে থাকে।ভোর হতে হতে বদির অবস্থা আরও খারাপের দিকে যেতে থাকে।ভোর হলে রাত্রি বদির ঘরে গিয়ে জানালা খুলে বদিকে ভোরের আলো শেষবারের মত দেখার এবং ছোয়ার সুযোগ করে দেয়।

চলচ্চিত্রটিতে আরেকটি দিক উপস্থাপন করা হয়েছে তা হলো বদির জন্য জেগে উঠা রাত্রির ভালোবাসা।বদি যুদ্ধে গেলে রাত্রি তার ফেরার অপেক্ষায় থাকতো। বদি যুদ্ধে যাওয়ার আগে রাত্রি তাকে দেশ যেদিন স্বাধীন হবে সেদিন সে কি করতে চায় তা বলে।

রাত্রি বলে-‘যেদিন দেশ স্বাধীন হবে সেদিন সে হারমনিকা বাজাতে বাজাতে রাস্তায় নাচবো আপনাকেও সেদিন থাকতে হবে আমার সাথে।’এই বলে সে বদির ঘর থেকে চলে যায়।

ছবিটিতে শীলা আহমেদ এর ডিম নিয়ে আঁকার কাহিনী আমাকে অনেক বেশি মুগ্ধ করেছে। ছবিটিতে ‘হাসনরাজার’ সঙ্গীতটিও আমাকে বেশ মুগ্ধ করেছে। ছবির কাহিনী, ডায়লগ, দৃশ্যায়ন, সংগীত অনবদ্য। ছবিটি বাংলার ইতিহাসে একটি প্রাণবন্ত ছবি।

লেখক: সাদিয়া বিনতে সানোয়ার
ডিপার্টমেন্ট অফ একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ সংবাদ