১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২১:২৫

তুপা: পাঠকের ‘সত্যিকারের ক্ষুধা’ মেটানো এক বই

লেখক এম মামুন হোসেন ও তার বই ‘তুপা’র প্রচ্ছদ

অমর একুশে বইমেলায় এম মামুন হোসেনের ‘তুপা’ উপন্যাসে তুপা, হাসান, সজিবের গল্পের সময়টি সেই ৯০ দশকের। যখন সম্পর্কগুলো খুব সহজ-সরল। এখনকার মত এত বেশি টেকনোলজি নির্ভর নয়। সময়টা আজ থেকে ২০ বছর আগে। খুব কী বেশি আগে? সে সময়ের সঙ্গে এই সময়ের হিসাবনিকাশ মেলাতে গেলেই বড্ড গন্ডগোল বেঁধে যায়। ৯০ দশকেও আমাদের জীবন কতো সহজ-সরল। মোবাইল, ল্যাপটপ, ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ, ইমো এসবের এতো দৌরাত্ম্য ছিলো না। সামাজিক এসব যোগাযোগ মাধ্যম সহজ-সরল সম্পর্কগুলো জটিল করেছে। কাছে আনেনি বরং আরও দূরে সরিয়ে নিয়েছে। কারো কারো এ নিয়ে ঘোর আপত্তি থাকতে পারে। সবাই ব্যস্ত ভার্চুয়াল জগতের লাইক, লাফ, এ্যাংরিতে।

বইটির প্রকাশক ‘অনিন্দ্য প্রকাশ’। অমর একুশে গ্রন্থমেলায় ৩১ নম্বর প্যাভিলিয়নে (অনিন্দ্য প্রকাশ) পাওয়া যাচ্ছে। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রুব এষ। ইতিমধ্যে বইটির প্রথম সংস্করণ শেষ হয়েছে। বইটির মূল্য ১২০ টাকা। বইটি রকমারি.কম (https://www.rokomari.com/book/193471/tupa) থেকে কেনা যাবে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘তুপা’ নিয়ে অনেকেই তাদের পাঠ প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। এক পাঠিকা লিখেছেন, লেখক হিসেবে এম মামুন হোসেন অনেক নিষ্ঠুর। একটা মানুষ জীবনে কিচ্ছু পাবে না! এটা কিছু হলো? আরেকটু কিছু লিখতেই তো পারতেন। জানেন, প্রতিটি পৃষ্ঠা আমি তীব্র আকাঙ্ক্ষা থেকে উল্টেয়েছি। ‘তুপা’ আমাকে ধরে রেখেছে।

একজন চিকিৎসক লিখেছেন, ‘আমি সেই আগের জীবনটায় ফিরে গিয়েছি। আমার মনে হয়েছে এ তো আমি। ঢাকায় এসে আমার জীবন। গ্রামে এক তরকারি দিয়ে ভাত খাওয়া। এগুলো আপনি জানলেন কীভাবে? আমি বলতে পারবো না, আমার হৃদয়ে কী রকম একটা কম্পন সৃষ্টি হয়েছে। ‘তুপা’ যেই ভালোলাগা তৈরি করেছে, আমি মন থেকে আপনার জন্য দোয়া করেছি আপনার এই লেখার শক্তিটা যেনো থাকে।’

একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেছেন, বলেন তো পৃথিবীর সবচেয়ে বোকা প্রাণির নাম কী? হো হো...‘তুপা’ সমাপ্তিটা খুউব ট্রাজেডি আর টাচি। একনাগারে বর্ণনা এক কথায় অসাধারণ। লেখক অনেক দূর যাবেন।

‘পৃথিবীর সব প্রাণীর চেয়ে মানুষই সবচেয়ে বোকা। তারা সংসার বাঁধে। ভালোবাসে। আশায় বুক বাঁধে। তারপর সব একদিন শেষ হয়ে যায়। জোলাবাত্তি খেলার মতো সব শেষ হয়ে যায়। আশা নিরাশায় রূপ নেয়। কেউ পরের খোঁজে ঘর ছেড়ে যায়...’ ‘তুপা’ গল্পের উপরের লাইনগুলো সত্যিই মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো। ‘তুপা’ পড়ে বললেন, এখানে উঠে এসেছে না বলা ভালোবাসা কথা। পাশাপাশি পরিবারের টানাপোড়েনের কথা। সাধারণত মধ্যবিত্ত পরিবারে এমনটাই বেশি চোখে পড়ে। লেখক সুন্দরভাবেই হাসান-সজিব ও তুপার ভালোলাগা এবং ভালোবাসার বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন। তবে গল্পে ‘ট্র্যাজেডি কিং’ নিয়ে লেখক কিছুটা বাড়াবাড়ি করেছেন। এটাতে তার ঘোর আপত্তি।

আরেক পাঠিকা লিখেছেন, বরাবরই আমি ক্ষুধার্ত টাইপের পাঠক... নতুন কোনো বই হাতে পেলে যতক্ষণ পড়া শেষ না করতে পারি একটা অস্থিরতা কাজ করে...কবিতা ভালোবাসার জয়গা হলেও উপন্যাসেই তৃপ্তি পাই বেশি..‘তুপা’ বইটি এমনই ক্ষুধা মেটানো একটি খোরাক... এক বসাতেই শেষ হয়ে যাওয়া গল্পটি আরেকটু কেনো বড় হলো না সেই আফসোস থাকলোই...তবে মামুন ভাই কথা দিয়েছেন, পরবর্তী বইয়ে আফসোস থাকবে না.. ‘হাসানের জীবনে তুপা না হউক অদিতি হলেও যেনো কেউ একজন আসে...! তার জন্য অপেক্ষার প্রহর সাজায়...’ সেই অপেক্ষায় থাকলাম আমিও...! শুভকামনা রইল ‘তুপা’র জন্য...!

দন্ত চিকিৎসক লিখেছেন, ‘তুপা’ একটি ত্রিভুজ প্রেমের গল্প। গল্পটি ৯০ দশকের যেখানে যান্ত্রিক কোলাহল কম। ভালবাসা ছিল অফুরন্ত আজকাল এর প্রেমের মত ন্যাকামি ছিল না। আমরা এখন যেমন মূহুর্তে ভালবাসার মানুষটির খবর নিতে পারি তখন কার সময়ে খবর নেয়াটা ছিল খুবই দুষ্কর। তারপর ও ভালবাসত কাছে আসতে। তেমনি একটি ত্রিভুজ প্রেমের গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে তুপা। গল্পটি হাসান সজিব আর তুপা-কে নিয়ে। যেখানে হাসান তুপাকে ভালবাসলেও তুপা ভালবেসেছে সজিবকে। খুবই সহজ সরল একটি সম্পর্ক। কিন্তু পূর্ণতা পায়নি তাদের ভালবাসা।

একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির ব্যবস্থাপক লিখেছেন, প্রথম উপন্যাসে লেখক বাজিমাত করবেন এই প্রত্যাশা করছি। বইটি হাতে পেয়েছি ১১ জানুয়ারি সেদিন রাতেই পড়া শুরু করেছি। সকালে অফিস এজন্য পুরো বই শেষ না করেই ঘুমাতে যেতে হয়েছে। এরপর সারাদিন অফিস শেষে বাসায় ফিরেই ‘তুপা’ শেষ করেছি।

পাঠক হিসেবে ‘তুপা’ লেটার মার্কস পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠককে ধরে রাখতে পেরেছেন লেখক এম মামুন হোসেন। উপন্যাসের সমাপ্তি মনে দাগ কেটে থাকবে অনেকদিন। পাঠক হিসেবে আমার মনে হয়েছে লেখক কছুটা কালজয়ী হুমায়ুন আহমেদের আলো-ছায়ায় বাঁধা পড়েছে। তাই সেই ছাপ রয়েছে ‘তুপা’তে। এখানে উপন্যাসের নাম নিয়ে আমার কিছুটা গোল বেঁধেছে। এখানে তুপাকে ছাড়িয়ে গেছে অন্যান্য চরিত্র।

শেষ কথা, নব্বই দশকের প্রেম, বন্ধুত্ব, পারিবারিক বন্ধন উঠে এসেছে এখানে। এগিয়ে যাক ‘তুপা’র সৃষ্টিকারী লেখক এম মামুন হোসেন।