মৃত্যুর পথে স্বাগতম— কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপকের গবেষণা

  © সংগৃহীত

দেশটাকে সবাই মিলে ইচ্ছে মত মৃত্যুকূপ বানাচ্ছি। ফেসবুকে একজন প্রফেসরের বিবৃতি সহ একাত্তর এবং এনটিভির একটা নিউজ ব্যাপকভাবে ভাবে ভাইরাল হচ্ছে। ইথানল বাষ্প গ্রহণ করলে নাকি করোনা থেকে মুক্তি মিলবে। খুবই ভয়াবহ বিষয় হবে এটি। কিছু সাধারণ বিষয় তুলে ধরছি...

১। প্রথমত আপনার আমার পক্ষে সবচেয়ে পরিশোধিত ইথানল পাওয়া সম্ভব না। ইন্ডাস্ট্রি বা সাধারণ বাজারে যেই ইথানল পাওয়া যায়, তাতে সালফারসহ অনেক বিষাক্ত উপাদান থাকে। এখন এই ধরনের ভেজাল ইথানল বা এলকোহল যদি আপনি শ্বাসের মাধ্যমে নেন, এই বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থগুলো আপনার শরীরে খুব সহজেই ঢুকে পড়বে। আর তার প্রভাব আপনার শরীরে অতি দ্রুত এবং মারাত্মকভাবে পড়বে। এর কারণে আপনার ফুসফুস, ব্রেইন মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যা আপনার মৃত্যুর কারণও হতে পারে। প্রমাণ হিসেবে বলা যায়, সম্প্রতি করোনা থেকে মুক্তি পেতে ইরানে ইথানল বিষক্রিয়ার জন্য সর্বমোট ২৪৪ জনের মৃত্যু সহ ২১৯৭ জন অসুস্থ হয়েছিল।

২) ধরে নিলাম, আপনি কোন ভাবে বিশুদ্ধ ইথানল বা এলকোহল সংগ্রহ করে ফেললেন, এবং আত্মবিশ্বাসের সাথে ইথানল বাষ্প নেয়ার প্রস্তুতি নিলেন। এখন যদি আপনি তা প্রয়োগ করেন, তো আরেকটা ভয়াবহ বিপদকে ডেকে আনলেন। ইথানল অনেক পরিচিত তার পানি শোষন করার ক্ষমতার ( Hygroscopic Properties) জন্য। আপনি যখন ইথানল বাষ্প গ্রহণ করবেন তখন আপনার শরীরের ভিতরে ইথানলের পানি শোষন করার ক্ষমতা অত্যাধিক হারে বেড়ে যাবে। যদি আপনি এই ইথানল আপনার ফুসফুস পর্যন্ত নিয়ে যান, সেখানে গিয়ে ফুসফুসের প্রয়োজনীয় পানি ইথানল শুষে ফেলবে। যা শ্বাসকষ্ট, ব্রেইন স্ট্রোক থেকে শুরু করে মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

৩) ইথানল বাষ্পের সাথে গ্রহণ করার একটা ট্রেন্ড নেশা সেবনকারীদের মাঝে ২০১৪ সালে কিছু কিছু জায়গায় শুরু হয়ে ছিল। খুবই অল্পমাত্রায় এই এলকোহল বাষ্প প্রচুর নেশা তৈরি করতো বলে, এই ট্রেন্ড খুব তাড়াতাড়ি জনপ্রিয় হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তা অনেকের চোখ অন্ধ করা থেকে শুরু করে অনেক ব্যক্তির মৃত্যু ঘটিয়ে ছিলো। এখন এই ট্রেন্ড নেশা গ্রহণকারীদের মাঝে আর প্রচলিত নেই। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপসহ অনেক দেশেই এই ধরনের প্র্যাক্টিস সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ।

সবাই দয়া করে এই ধরনের আত্মঘাতী কাজ করা এবং শেয়ার থেকে দূরে থাকুন। মিডিয়ার কাছেও আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করি।

পুনশ্চ: প্রিয় নেতা জয়নাল হাজারীর যে ভিডিও ক্লিপ ফেসবুকে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তা ঘুর্ণাক্ষরেও বিশ্বাস করার কোন কারণ নাই। মানুষের ফুসফুস প্লাস্টিকের খেলনা না যে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে রাখলাম।

মূল তথ্যসূত্র ও লেখা: রাজিব রাজু, ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকা।

লেখক: চেয়ারম্যান, ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি অ্যান্ড রাইটস (এফডিএসআর)।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)


সর্বশেষ সংবাদ