বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

ফর্মফিলাপে শিক্ষার্থীদের চরম ভোগান্তি, অনলাইন সিস্টেমের দাবি

ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীদের ফরমফিলাপ কার্যক্রম চলছে
ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীদের ফরমফিলাপ কার্যক্রম চলছে

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার ফর্মফিলাপ ও টাকা জমা দিতে না পেরে চরম অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের  শিক্ষার্থীরা। ভোগান্তি কমাতে অনলাইন ভিত্তিক ফর্মফিলাপ প্রক্রিয়া চালু করার দাবি তাদের।

জানা যায়, গত ৯ মে থেকে ১৩ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্সের বিভিন্ন অনুষদের ও মাস্টার্সের সকল বিভাগের শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার ফর্মফিলাপ ও টাকা জমা দেয়ার সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার বেশি ভিড় না হলেও শুক্র-শনির ছুটি শেষে রবিবারে ফর্মফিলাপ করতে এসে বিপাকে পড়েন শিক্ষার্থীরা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও ব্যাংকে টাকা জমা দিতে পারেননি অনেকেই। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা জানান, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অনুষদের প্রায় ৭ হাজার ছাত্রছাত্রী পড়াশুনা করছেন। প্রতি সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষা শুরুর আগে পরীক্ষার ফি ও অন্যান্য খরচ বাবদ ফর্মফিলাপ ও টাকা জমা দিতে হয়। প্রায় ২-৩ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ফর্মফিলাপের সময় থাকে তিন-চার দিন। ফরম ফিলাপ ও টাকা জমাদানের প্রক্রিয়াও বেশ জটিল।

প্রতিটা শিক্ষার্থীকে প্রথমত ডিন অফিস বা উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা ভবন থেকে ফরম নিতে হয়। তারপর সেই ফরম পূরণ করে কোষাধ্যক্ষ অফিস থেকে টাকা জমা দেয়ার রশিদ নিয়ে হিসাবরক্ষণ অফিসারের স্বাক্ষর নিতে হয়। এরপরে সেই রশিদ ও নির্ধারিত টাকা নিয়ে গিয়ে জমা দিতে হয় পূবালী ব্যাংকে। আবার কোষাধ্যক্ষ ভবন থেকে কোষাধ্যক্ষের স্বাক্ষর নিতে হয়। এভাবে ফরম ও টাকা জমার রশিদ নিয়ে জমা দিতে হয় নিজ হলের অফিসে। হল অফিস থেকে পরদিন প্রভোস্টের স্বাক্ষরকৃত ফরম দেয়া হলে তা ডিন অফিস বা নিজ ডিপার্টমেন্টে জমা দিতে হয়। এত বড় একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শেষ হয় সেমিস্টার ফাইনালের ফর্মফিলাপ।

কিন্তু ফরম ফিলাপ চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাস বন্ধ না থাকায় সব ছাত্র-ছাত্রীদের এই কাজ করতে হয় দুপুর ১২ টা থেকে ২টার মধ্যে। এক সাথে সকলে আসার ফলে কোষাধ্যক্ষ ভবন ও পূবালী ব্যাংকে প্রচণ্ড ভিড় প্রত্যক্ষ করা গেছে। এতে শিক্ষার্থীদের দাঁড়িয়ে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা ৷

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাস্টেইনেবল অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড ফুড সিকিউরিটি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী অরণ্য সাদেকুর রহমান বলেন, অনলাইনের মাধ্যমে ফর্মফিলাপ এবং টাকা জমা নেওয়া ব্যবস্থা করা হলে সবার কষ্ট এক নিমিষে কমে যাবে। যদি ডিজিটালাইজেশন করতে দেরি হয়, তাহলে সব লেভেল, ফ্যাকাল্টির ফর্মফিলাপের জন্য মাত্র ২-৩ দিন না দিয়ে কমপক্ষে এক মাস সময় দিন। নির্দিষ্টভাবে বলে দিন কোন লেভেল, কোন ফ্যাকাল্টি কবে জমা দিবে। এতে শিক্ষার্থী, কোষাধ্যক্ষ ও ব্যাংকের লোকজনের কষ্ট অনেকখানি কমে যাবে৷

বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ব বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী কামরুল হাসান কামু বলেন, মাত্র ৬-৭ হাজার শিক্ষার্থীকে বাকৃবি প্রশাসন কি অটোমেশনের আওতাভুক্ত করতে পারবেনা? সারাদেশ যেখানে ডিজিটালাইজেশন হচ্ছে সেখানে শুধু প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাবে আমাদের ভোগান্তি হচ্ছে। আগামী সেমিস্টারের মধ্যেই সব কিছুতে অটোমেশন করতে হবে নয়তো ছাত্র-ছাত্রীরা এর উপযুক্ত জবাব দিবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, ছাত্রদের ভোগান্তি কমানোর বিষয়টা আমাদের মাথায় আছে। ভবিষ্যতে যাতে ভোগান্তি না হয় সে বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ নিবো। আর অনলাইন ভিত্তিক ফরম ফিলাপ প্রক্রিয়া চালু করা যায় কিনা সে বিষয়ে আমি কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলব।