শেকৃবিতে দফায় দফায় ছাত্রলীগের সংঘর্ষ, আহত অর্ধশত

সংঘর্ষে আহতরা
সংঘর্ষে আহতরা  © টিডিসি ফটো

পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণে মতানৈক্যের জের ধরে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) ছাত্রলীগের তিন আঞ্চলিক গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের উপস্থিতিতে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের দুটি আঞ্চলিক গ্রুপ একত্রিত হয়ে আবাসিক হলের রুমে রুমে গিয়ে অপর আঞ্চলিক গ্রুপের সমর্থকদের ওপর আক্রমণ করার অভিযোগ উঠেছে।

এ ঘটনায় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হল ও শেরেবাংলা হলের প্রায় ৩০টি রুম ভাংচুর করা হয়েছে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের আহতের সংখ্যা প্রায় অর্ধশতাধিক। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে ২টা পর্যন্ত দফায় দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে জড়ানো তিনটি গ্রুপ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের অঞ্চল ভিত্তিক সংগঠন উত্তরাঞ্চল ছাত্রলীগ, শেকৃবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাসুদুর রহমান মিঠু সমর্থিত দক্ষিণাঞ্চল ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সমর্থিত ময়মনসিংহ অঞ্চল।

জানা যায়, গত মঙ্গলবার দুপুরে ক্লাসে পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ নিয়ে ছাত্রলীগের উত্তরাঞ্চল গ্রুপের সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জাকির হোসেনের সাথে একই বর্ষের শেকৃবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মিজান সমর্থিত ময়মনসিংহ অঞ্চল গ্রুপের সদস্য রাসেলের বাকবিতণ্ডা হয়। এর জের ধরে ওইদিন বিকেলে কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার সামনে তাদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনা ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে মিজান সমর্থিত গ্রুপ শেরেবাংলা হলে ও উত্তরাঞ্চল ছাত্রলীগ গ্রুপ ওই হলের পাশে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অবস্থান নেয়। পরে রাত ৮টার দিকে প্রক্টোরিয়াল বডির সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনার জন্য দুই পক্ষের নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনায় বসেন।

তবে দুই পক্ষের মধ্যেই উত্তেজনা আরও বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে দুই পক্ষই একে অপরকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ি করে এবং তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে এবং শেরেবাংলা হলের বেশ কিছু রুম ভাংচুর করা হয়। এসময় মিজান গ্রুপের ১৬জন ও উত্তরাঞ্চল ছাত্রলীগ গ্রুপের ৪জন আহত হয়। পরে শেরেবাংলা থানা পুলিশের সহায়তায় সাময়িকভাবে ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। পরে রাত ১০টার সময় উত্তরাঞ্চল ছাত্রলীগের সমর্থকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনে চাতালে অবস্থান নেয় এবং প্রশাসনের কাছে শেরেবাংলা হলের আবাসিক ছাত্রদের নিরাপত্তার দাবি জানায়। কিন্তু প্রশাসন নিরাপত্তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে ওই হলের ছাত্রদের রাতে অন্য হলে থাকার জন্য অনুরোধ জানায়। ফলে ছাত্ররা চাতালেই বসে পড়ে এবং হলে নিরাপত্তা পাওয়ার আগ পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করে। এর ঘন্টা খানেক পর শেকৃবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাসুদুর রহমান মিঠু হলের নিরাপত্তার ব্যাপারে আশ্বাস দিলেও ঘটনাস্থলে সাধারণ সম্পাদক মিজান না আসায় ছাত্ররা সভাপতির ওপর অনাস্থা প্রকাশ করে।

এসময় ছাত্ররা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটিকে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বলে আখ্যায়িত করলে মিঠু তাদের ছাত্রলীগের মধ্যে বহিরাগত অনুপ্রবেশকারী বলে উল্লেখ করেন। ফলে উপস্থিত ছাত্ররা ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে থাকে এবং উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এর কিছুক্ষণ পর প্রক্টোরিয়াল বডির সদস্যরা ভিসির সাথে জরুরি মিটিংয়ের জন্য চলে যায়। এসময় সভাপতি মিঠু সমর্থিত দক্ষিণাঞ্চল ও সাধারণ সম্পাদক মিজান সমর্থিত ময়মনসিংহ অঞ্চলের ছাত্রলীগের কর্মীরা লাঠি, রড, জিআই পাইব নিয়ে মিছিল করে। এসময় তারা পুলিশের সামনে চাতালে অবস্থানরত উত্তরাঞ্চল ছাত্রলীগের কর্মীদের ওপর আক্রমন চালায়।

এতে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলে আশ্রয় নেয়। পরে মিঠু-মিজান সমর্থিত গ্রুপ ওই হলের উত্তরাঞ্চলের রুম ভাংচুর করে এবং রুমে রুমে গিয়ে ওই অঞ্চলের ছাত্রলীগের কর্মীদের মারধর করে। এতে উত্তরাঞ্চলের প্রায় ২৮ জন ও অন্য দুই অঞ্চলের ৬ জন ছাত্র আহত হয়। এদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এতে ৫ জনের অবস্থা গুরুতর হলে তাদের ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়। গুরুতর আহতদের মধ্যে উত্তরাঞ্চলের ২য় বর্ষের ছাত্র লাবিবের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

এ বিষয়ে উত্তরাঞ্চল ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে তাদের ক্যাডার বাহিনী পুলিশের উপস্থিতিতে আমাদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচীতে হামলা চালিয়েছে। আমাদের রুম ভাঙচুর করা হয়েছে। এতে অনেক নিরীহ শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এতে প্রমানিত হয় তারা সকল শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করে না। সাংগঠনিকভাবে এই মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির বিলুপ্তির পাশাপাশি প্রশাসনিকভাবেও দোষীদের নায্য বিচারের দাবি জানাই।’

শেকৃবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘শেকৃবি ছাত্রলীগ একটি শান্তিপূর্ণ ইউনিট। কিছু মহল এই শান্তি বিনষ্ট করে অরাজকতা চালাতে চায়। তবে সকল ধরনের অপশক্তি রুখতে শেকৃবি ছাত্রলীগ সর্বদা প্রস্তুত।’

শেকৃবি ভিসি অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, প্রক্টরিয়াল বডি ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে পরিস্থিতি মোকাবিলায় চেষ্টা চালিয়েছে। শিক্ষার্থীর আহত হওয়ার খবর পেয়েছি। গুরুতর আহত এক শিক্ষার্থীর চিকিৎসা সহায়তায় বিশ্ববিদ্যালয় সর্বোত্তক চেষ্টা করবে। তদন্ত কমিটি গঠন করে সংঘর্ষে জড়িতদের যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।


সর্বশেষ সংবাদ