এবারও ভর্তিচ্ছুদের সব ধরণের সহায়তা দেবে নোয়াখালীবাসী

  © ফাইল ফটো

ত্রিপুরা পাহাড়ের প্রবাহিত পানিতে প্লাবিত হয় ভুলুয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চল। পরিত্রাণের উপায় হিসেবে একটি খাল খনন করে আগত পানিকে ফেনী নদীর দিকে প্রবাহিত করা হয়। নতুন খালকে এখানকার আঞ্চলিক ভাষায় নোয়া (নতুন) খাল বলা হত। এর ফলে অঞ্চলটি এক সময়ে লোকমুখে পরিবর্তিত হয়ে নোয়াখালী হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

এক সময়কার মহকুমা এখনকার জেলা নোয়াখালী রাজধানীর দক্ষিণ-পূর্বে ১৯০ কি. মি. দূরে অবস্থিত। নোয়াখালী বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের একটি জেলা। ঐতিহ্যগতভাবে নোয়াখালীর মানুষ আতিথেয়তায় অনন্য। অতিথিপরায়ণতার জন্য খুব অল্প সময়ে অন্যদের প্রিয় করে নিতে পারেন এই অঞ্চলের মানুষ। তারই ধারাবাহিকতায় এই জেলার মানুষের আতিথেয়তার প্রমাণ পেয়েছে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলে।

এই অঞ্চলে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। নোয়াখালীবাসী তাদের মাটিতে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি পেয়ে নিজেদেরকে খুব ভাগ্যবান মনে করে। এমনটাই মনে করছেন স্থানীয়রা।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের সম্মান-মর্যাদা এবং ভালোবাসা দিয়ে আপন করে নিয়েছে নোয়াখালীর মানুষ। শুধু এখানকার ছাত্র-শিক্ষক বা কর্মকর্তা-কর্মচারী নয়, নোয়াখালীবাসীর আতিথেয়তা সম্পর্কে জেনেছে দূর-দূরান্ত থেকে আগত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা।

প্রতিবছর ভর্তি পরীক্ষা সময় সারাদেশে ছুটাছুটি করতে হয় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের। একটা আসনের জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে গিয়ে অনেক হয়রানির শিকার হতে হয় তাদের। কিন্তু নোয়াখালীতে আসা ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সহযোগিতার মাধ্যমে নিজেদের সুনাম কুড়িয়ে নেয় এখানকার মানুষ।

নোয়াখালী জেলা নিয়ে নানা আলোচনা সমালোচনা থাকলেও বাস্তবে এই জেলার মানুষ কতটা অতিথিপরায়ণ তার প্রমাণ মেলে ভর্তি পরীক্ষার সময়। পরীক্ষা দিতে এসে এ অঞ্চলের মানুষ সম্পর্কে ধারণা পরিবর্তন হয়ে যায় ভর্তিচ্ছুদের। এখানকার মানুষের সহযোগিতা-সহমর্মিতা এবং সৌহার্দ্য যে কারোরই হৃদয় জয় করে নিতে সক্ষম।

একারণেই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত পরীক্ষার্থীরা যখন ফিরে যায় তখন নোয়াখালী সম্পর্কে তাদের ধারণা বদলে যায়। অনেকেই মুগ্ধ হয়ে নোয়াখালীর মানুষের এ ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ স্বীকার করে অকুণ্ঠচিত্তে। এতদিন নোয়াখালী নিয়ে হাসিতামাশা করা যুবকটাও অনন্য এ ভালোবাসা পেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে ভুলে না। আনন্দে আত্মহারা হয়ে তখন তা প্রকাশ করার জন্য উদগ্রীব হয়ে প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে বেছে নেয় সামাজিকযোগাযোগের মাধ্যমগুলো।

ইফতেখার নামে ২০১৮-১৯ সেশনের এক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর মুগ্ধতা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের চিত্রটা ছিল এরকম। ‘ট্রেনে কুমিল্লার লাকসাম থেকে বাম দিকে (দক্ষিণে) গেলেই একটা বৃহত্তর জেলা। এই জেলার মুখে ঢুকলেই বাতাসের ঝাপটাই বলে দেয় এটাই নোয়াখালী।

ইফতেখার বলেন, ট্রেন থেকে নামামাত্র এক ভাই আমার ব্যাগগুলো নামিয়ে দিলেন। আরেকজন ব্যাগগুলো নিয়ে গলে স্টেশনের কাউন্টারে। আমি বললাম কোথায় যাচ্ছেন? ভাইয়া বললেন- আপনার থাকার জায়গার ব্যবস্থা করতে, আসেন। আমি বললাম- ভাই আমি তো আপনাকে চিনি না। ভাইয়া বললেন- তো কি হইসে, আসেন। ওদের গাড়িতে করে নিয়ে থাকার জায়গা দিলো রাতের খাবার, সকালের নাস্তা।

তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশের কোথাও এমনটা দেখি নাই। ভাই মনের মধ্যে যেভাবে আপনারা জায়গা করে নিয়েছেন তা কখনো ভুলব না। এখানকার অলিগলি মনে হয়েছে যেন আমি সব চিনি। অনেক পরিচিত। আসার সময় দাঁড়িয়ে আছি। এক ভাই বলল, আসেন। তখন আমি উনাকে কিছু জিজ্ঞেস করি নাই। দেখছিলাম উনি কি করেন। আমাকে চৌরাস্তার একটা সিএনজিতে তুলে দিলেন। শুধু তাই নয়, আবার জিজ্ঞেস করলেন ভাই ভাড়া আছে তো। আমি তো পুরা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম।

এরপর সিএনজি চালক আমাকে নিজে এসে বাসে তুলে দিলেন। আমি এইবারই এখানে প্রথম এসেছি। কিন্তু একবারের জন্যও মনে হয়নি আমি অপরিচিত কোথাও আছি। আসলে আমি এমন কিছু আশা করিনি। মনে হচ্ছে ওদের শরীরের সবটাই কলিজা। ধন্যবাদ নোয়াখালী। আমি আবার ফিরে আসব তোমার কাছে।

ইফতেখারের মতই পরীক্ষা দিতে আসা লাখো শিক্ষার্থীর নোয়াখালী সম্পর্কে ধারণা বদলে যায় আর তৈরী হয় নতুন এক অনুভূতি এবং ভালোবাসার সংজ্ঞা।

প্রতি বারের ন্যায় এবারও সারাদেশ থেকে আগত ভর্তি পরীক্ষার্থীদের থাকা-খাওয়াসহ সর্বাত্মক সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছে নোয়াখালীবাসী। আসন্ন ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে স্থানীয় সরকার দলীয় নেতাদের প্রস্তুতিমূলক বৈঠক শেষে এমনটি জানিয়েছেন সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরী।

তাই প্রতিবারের মত এবারও ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীসহ তাদের সাথে আগত সকলেই নোয়াখালীর মানুষের চিরচেনা আতিথেয়তায় মুগ্ধ হবে এটাই প্রত্যাশিত। স্থানীয়রা মনে করেন, এভাবেই নোয়াখালী হয়ে উঠবে ঐতিহ্য আতিথেয়তায় অনন্য এক নোয়াখালী।

লেখক শিক্ষার্থী: মো. ফারহান, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ সংবাদ