ভর্তিচ্ছুদের সহায়তা করে তৃপ্ত অগ্রজরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে আসা ভর্তিচ্ছুদের সহযোগিতা করছেন অগ্রজরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে আসা ভর্তিচ্ছুদের সহযোগিতা করছেন অগ্রজরা।  © টিডিসি ফটো

"ওকে আমি ভার্সিটিতে প্রথম যেদিন দেখেছিলাম সেই দিনই ওর প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। যার কারণে ভার্সিটিতে অনেক সুন্দরী মেয়ের প্রপোজ পাওয়ার পরও আমি ওকে ভালোবেসেছিলাম।"

উপরের কথাগুলো শুধু একটা কবিতা বা গল্পের নয়, বাংলা সাহিত্যের রোমান্টিক গল্পের পাতায় পাতায় লাইনে লাইনে এসব কথা পাওয়া যাবে। ভার্সিটি জীবনে পা রাখার পর সাহিত্যের এসব কথা দারুণভাবে প্রভাব পেলে তরুণ-তরুণীদের মনে।

শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদভুক্ত ‘গ' (সি) ইউনিটের অধীনে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবার এ ইউনিটে ১২৫০টি আসনের বিপরীতে ভাগ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার লড়াইয়ে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ২৯,০৫৮ জন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্য শুধু মেধাবীরাই হবেন এ সিদ্ধান্তে একাট্টা ছাত্র শিক্ষক থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতারা। তাই দেশের নানা প্রান্ত থেকে ভাগ্য পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়া নবীনদের সবাই বিভিন্নভাবে সাহায্য করছেন।

তবে ভর্তিচ্ছুদের কেন সাহায্য করে অগ্রজরা। এনিয়ে রয়েছে নানান সমীকরণ। তার কয়েকটা মেলানোর চেষ্টা করবো এখানে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রিয়াজ উদ্দিন সোহেল। শুক্রবার ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকলেও ভর্তিচ্ছুদের সাহায্য করতে সকাল থেকে ক্যাম্পাসে তিনি। সাধ্যমত নবীনদের সহযোগিতা করছেন, দেখিয়ে দিচ্ছেন গন্তব্য। তবে একটু পর পরই তার মুখে শোনা যাচ্ছে সেই পরিচিত গান, "তুমি আমার এমনি একজন যাকে একজীবনে ভালোবেসে ভরবে না এই মন।"

প্রতিবছর দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে পরীক্ষা দিতে আসা শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করে থাকেন অগ্রজরা। এরমধ্যে আছে এলাকাভিত্তিক ও বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন।

দূরদূরান্ত থেকে আগের রাতে ক্যাম্পাসে আসা নবীনদের রাতে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়ে না ঘুমিয়ে কাটানো ১ম ও ২য় বর্ষের শিক্ষার্থীদের হিসাব আলাদাই। নিজের পকেটে টাকা না থাকলেও যেভাবেই হোক সাধ্যমত আপ্যায়নের চেষ্টা করে নিজ এলাকা বা প্রতিষ্ঠান থেকে আসা ভর্তিচ্ছুকে।

রিয়াজ উদ্দিন সোহেলের কাছে এমন প্রশ্ন ছিলো। তিনি বলেন, অগ্রজরা নবীনদের সাহায্য করে কারণ একদিন তারাও এমন সহযোগিতা পেয়েছিলো। আর অপরিচিতদেরকে সহযোগিতা করে মূলত দায়িত্ববোধ থেকে।'

স্কুল জীবনে টিনেজাররা স্বপ্ন দেখে কলেজ লাইফে উঠে প্রেম করবে। এজন্য ভালো রেজাল্ট করতে হবে, আর কলেজে উঠার পরে শিক্ষক বলেন, "ভালো করে পড়ালেখা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠো, তারপর ওখানে গিয়ে প্রেম করতে পারবে কেউ নিষেধ করবে না।'

এই স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় করতে করতে অনার্স জীবনের এক বছর পার করে দিয়েছেন মুহসীন হলের শিক্ষার্থী মনিরুল। সিনিয়রের দিকে তাকানোর সাহস তার নেই, মনের মানুষ হতে পারতেন এরকম সম্ভাব্য ইয়ারমেটরা ইতোমধ্যেই তাদের মনের মানুষ খুঁজে ফেলেছেন তাই মনিরুলের একমাত্র ভরসা অনাগত অনুজ। তার ১ বছরের অপেক্ষার পর শুরু হয়ে গেছে ভর্তি পরীক্ষা, এবার নিশ্চয় সে খুঁজে পাবে তার মনের মানুষ।

আবার ফেরা যাক রিয়াজ উদ্দিন সোহেলের কথায়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার শিক্ষার্থীদের সংগঠন 'ঢাবির চকোরী' র সভাপতি। তার সংগঠনের উদ্যোগে নতুনদের স্বাগতম জানাতে ব্যানার করা হয়, পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্র দেখিয়ে দিতে বসে হেল্প ডেস্কও।

ভর্তি কাজে নবীনদের সহযোগিতা করে কি তাদের মন পাওয়া যাবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আসলে আমরা ছেলে-মেয়ে সবাইকে সহযোগিতা করে থাকি। ছেলেদের জন্য নিজের বেড ছেড়ে দিই, যেসব মেয়ে আসছে তাদের মেয়েদের হলে থাকার ব্যবস্থা করি। এসব করে আমরা নিজেরা সন্তুষ্ট হয়, শান্তি পাই। এর কোন প্রতিদান পাওয়ার ইচ্ছা আমাদের থাকে না। তবে আমাদের সহযোগিতা পেয়ে কোন নবীনের মনে যদি ঘন্টা বাজে সেটা বাদ বাকি আল্লাহর ইচ্ছা। কারণ জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ সব তিনি ঠিক করেন।


সর্বশেষ সংবাদ